
পুত্র সন্তানের বাবা হলেন জুলাই বিপ্লবে শহীদ সুজন
পারলেন না সন্তানের মুখ দেখে যতে!
বরিশাল পোস্ট ডেস্ক ॥ ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সারাদেশে ঝরে গেছে বহু তরুণ-তাজা প্রাণ। শেখ হাসিনা সরকার আন্দোলন দমনে বেছে নিয়েছিল নির্মম পন্থা। এই আন্দোলনে শহীদ হওয়া মো: সুজন খানের বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়লেন তার বাবা মো: বাবুল খান।
জুলাই-২০২৪ বিপ্লবে যাত্রাবাড়ীতে পুলিশের গুলিতে নিহত হন কাঁঠালিয়া উপজেলার মো: সুজন খান। তার স্ত্রী জান্নাত বেগমের কোলেজুড়ে এলো এক ফুটফুটে পুত্র সন্তান।
আগস্ট মাস, জান্নাত বেগম তখন ছয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা। স্বামী হারানোর শোক নিয়ে ওই সময় তিনি বারবার মূর্ছা যাচ্ছিলেন। দীর্ঘ চার মাস পর ছেলে সন্তানের মুখ দেখে তার মুখে ছিল বেদনা ও আনন্দের মিশ্রণ।
শহীদ সুজন খানের বাবা মো: বাবুল খান বলেন, ‘গত বুধবার (১৫ জানুয়ারি) ঢাকার স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ মিটফোর্ড হাসপাতালে আমার ফুটফুটে নাতির জন্ম হয়েছে। তার নাম রাখা হয়েছে মো: সজল খান।’
কিন্তু হাসপাতালজুড়ে সেই আনন্দ মুহূর্তে যেন তীব্র বেদনার স্মারক হয়ে ওঠে। এই নবজাতককে কোলে নিয়ে কতই না খুশি হতেন তার বাবা মো: সুজন খান। কিন্তু তিনি আজ আর নেই। চার মাস আগে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহত হন তিনি।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ৪ আগস্ট দোকানের মাল ডেলিভারি দিতে যাওয়ার পথে যাত্রাবাড়ীতে পুলিশ ও বিজিবির নির্বিচার গুলিবর্ষণে গুলিবিদ্ধ হন সুজন। আহত অবস্থায় ঢাকা মেডিক্যালে নিয়ে গেলে সেখানে মৃত্যু তার।
শহীদ সুজনের বড় ভাই মো: রুবেল খান বলেন, ‘কোটা সংস্কার আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে ঢাকায় নিহত সুজন খান আমার ছোট ভাই। আজ এ পৃথিবীতে বেঁচে নেই, কিন্তু তার সৃতি নিয়ে আমরা বেঁচে আছি। শহীদ সুজন দ্বিতীয়বারের মতো বাবা হয়েছে। মা ও নবজাতক দু’জনই ভালো এবং সুস্থ আছে।’
পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী মো: সুজন খান মৃত্যুতে এক অমানিশার অন্ধকার নেমে আসে স্ত্রী জান্নাত বেগমের। ইসলামপুর কাপড়ের দোকানের কর্মচারী ছিলেন সুজন, কেরানীগঞ্জের শুভাট্টায় একটি ভাড়া বাসায় স্ত্রী ও আড়াই বছর বয়সী মেয়ে নুসরাত জাহান নূরকে নিয়ে বসবাস করতেন তিনি।
মো: সুজন খানের গ্রামের বাড়ি ঝালকাঠি জেলার কাঁঠালিয়া উপজেলার দক্ষিন চেচঁরী (জমাদ্দার হাট) গ্রামের চেচঁরী রামপুর ইউনিয়নে। বাবা মো: বাবুল খান এবং মা মোসা. দুলিয়া বেগম।
জান্নাত বেগম এক মেয়ে ও সদ্য ভূমিষ্ঠ ছেলেকে নিয়ে বাকি জীবন কারো বোঝা না হয়ে কিছু একটা করে জীবিকা নির্বাহ করতে চায়। এ ব্যাপারে সরকারের কাছে তার আবেদন, তাকে যেন একটা কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দেয়া হয়। যেন দুই সন্তান নিয়ে সৎভাবে জীবিকা নির্বাহ করতে পারেন।
অসহায় এ পরিবারটি সকলের সহযোগিতা কামনা করছে।