বরিশাল বিভাগপিরোজপুরপ্রধান শিরোনাম

নেছারাবাদে পলাশের প্রতারণায় নিঃস্ব তিন শতাধিক পরিবার

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বরিশাল পোস্ট ॥ কৃষি পণ্যে ও কাঠ ব্যবসার জন্য দেশব্যাপী পরিচিত পিরোজপুর জেলার নেছারাবাদ। এই কৃষি পণ্যের উৎপাদনের জন্য ক্ষুদ্র ঋণ নিয়ে উপজেলার অনেকই হয়েছেন আত্মনির্ভরশীল। কৃষকদের এই সহজ ঋনের ফাঁদে ফেলে উপজেলাটিতে ব্যাঙ্গের ছাতার মত গজিয়েছে সমবায় সমিতি।

সরজমিনে একাধিক কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, একাধিক ব্যক্তি ঋণ দান সমবায় সমিতির নামে সুদের ব্যবসা খুলে হঠাৎ করেই লাপাত্তা হয়ে যান। যার সংখ্যা কম নয়।

এমনই একটি মামলার সূত্র ধরে উপজেলার জলাবাড়ি ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের জলাবাড়ি গ্রামে যায় এ প্রতিবেদক। যে গ্রামের তিন শতাধিক পরিবারকে সহজ শর্তে ঋণ দেয়ার নামে নিঃস্ব করেছে ‘জণকল্যান ক্ষুদ্র সমবায় সমিতি’।

এই সমবায় সমিতিটিতে সাড়ে ৭ হাজার টাকা জমা রেখেছিলেন কচুর লতি বিক্রি করা এক বৃদ্ধা নারী। তার ইচ্ছে ছিলো টাকা দিয়ে ঘরের চালা ঠিক করবে। কিন্তু ‘জণকল্যান ক্ষুদ্র সমবায় সমিতি’ এর মালিক সমর মিস্ত্রির প্রতারণার তার সে আশা মলিন হয়েই রইলো। আক্ষেপের সুরে বৃদ্ধা বিচার দিলেন সৃষ্টির কর্তার কাছে।

জলাবাড়ি গ্রামে গিয়ে ভুক্তভোগীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ‘জণকল্যান ক্ষুদ্র সমবায় সমিতি’ এর নামে বেশ কিছু জমি ক্রয় করা ছিলো। কিন্তু সেই জমি এলাকার ত্রাসখ্যাত পলাশ হালদার নিজের বলে দাবী করে দখলে নিয়েছে।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, ওই গ্রামের অন্যের বাড়িতে কাজ করা মনরঞ্জন হালদার। কোনমতে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে সন্তানের নিয়ে একটি ছোট কুড়ে ঘরে থাকতো।

ছোট বেলায় এক জ্বরে একটি পায়ে সমস্যা হয় মনরঞ্জন হালদারের ছেলে পলাশ হালদারের। পায়ে সমস্যা নিয়ে এলাকায় বসে গড়ে তোলে অপরাধের স্বর্গরাজ্য। তিনি উপজেলা শহরের কিছু মাস্তানদের নিয়ে এলাকায় চালাতো ত্রাস। শুরু করে সুদের ব্যবসা।

সুদের টাকার ৫ গুন বেশি নেয়া হলেও কমে না সুদ। কেউ সুদ দিতে অস্বীকার করলে তাদের উপর চলে জুলুম নির্যাতন। গ্রামবাসী জানায় জণকল্যান ক্ষুদ্র সমবায় সমিতি ও মায়ের আচল ক্ষুদ্র সমবয় সমিতি মালিক সমর পালিয়ে যাওয়ার পরে গ্রামের মানুষ সমরের ফেলে যাওয়া জমিতে গেলেই সেখানে হাজির হয় পলাশ হালদার।

তিনি গিয়ে বলে এই জমির মালিক আমি। তখন এলাকার মানুষ প্রতিবাদ করতে গেলে একজনকে পিটিয়ে জখম করে পলাশের বাহিনী।

এই পলাশ’র সখ্যতা ছিলো পতিত আওয়ামী সরকারের মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিমের সাথে। সেই সুবাধে গত ১৫ বছরে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ বনে গেছে তার। পলাশের বিরুদ্ধে কেউ থানায় মামলা করতে গেলে ওই থানার ওসি মামলা নিবে বলে জানিয়ে কোর্টে যাওয়ার পরামর্শ্ব দেন। এ কারনেই অনেকে মুখ খুলতে পারে না।

সর্বশেষ চলতি মাসের ৩ তারিখে সমর ও পলাশের বিরুদ্ধে নেছারাবাদ থানায় একটি মামলা দায়ের করেন হুমায়ন কবির নামের এক ব্যক্তি। সেই মামলায় পলাশ স্বেচ্ছায় আদালতে হাজির হলে আদালত তাকে জেল হাজতে পাঠায়। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা আদালতে রিমান্ডের আবেদন করলে সুকৌশলী পলাশ নিজেকে হৃদরোগী পরিচয় দিয়ে রিমান্ড থেকে পার যায়।

অপরদিকে পলাশের বিচারের দাবীতে এলাকায় একাধিক মানববন্ধন করা হলেও টনক নরেনি কর্তৃপক্ষের। সূত্রে জানা যায়, কারোর সবজি বিক্রির টাকা, কারোর জমিসহ বাগান বিক্রির টাকা, এভাবে একই এলাকার প্রায় শতাধিক মানুষের তিল তিল করে জমানো টাকা বিশ্বাস করে রেখে ছিলেন মায়ের আঁচল ক্ষুদ্রঋণ নামের একটি গ্রামীণ এনজিওতে। সকলের সেই জমানো প্রায় ৭ থেকে ৮ কোটি টাকা নিয়ে লাপাত্তা হয় সমিতির মূল হোতা সমর মিস্ত্রী আর তার সহযোগী পলাশ হালদার এবং বৃন্দাবন মিস্ত্রী।

একাধিক সূত্রে জানা যায়, উপজেলার জলাবাড়ি ইউনিয়নের কৃষক থেকে শুরু করে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, দিনমজুর, ছাত্রসহ প্রায় ৩ শতাধিক স্থানীয় বাসিন্দাদের প্রায় ৭ থেকে ৮ কোটি টাকা নিয়ে লাপাত্তা হন একই ‘জণকল্যান ক্ষুদ্র সমবায় সমিতি’ মালিক মৃত মুকুন্দ লাল মিস্ত্রীর পূত্র সমর মিস্ত্রী। আর তার এই কর্মকান্ডে সহযোগিতা করেন মনোর রঞ্জন হালদার এর পুত্র পলাশ হালদার (৩৮) এবং মৃত মন্মথ মিস্ত্রীর ছেলে বৃন্দাবন মিস্ত্রী (৫৫)।

 

আরও দেখান

সম্পর্কিত খবর

Back to top button