
বরিশাল মডেল স্কুল শিক্ষকের মাদ্রাসা বাণিজ্য!

এসএন পলাশ, বরিশাল পোস্ট ডেস্ক : বরিশাল সরকারি মডেল স্কুল এন্ড কলেজে চাকরির পাশাপাশি মাদ্রাসা বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছেন আরবি বিষয়ের প্রভাষক মুহাম্মদ মুস্তফা কামাল।
কয়েক বছর যাবত চাকরি ও মাদ্রাসা বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে একই সাথে। এতেকরে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। তার বিরুদ্ধে একাধিক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে । অভিযোগ রয়েছে, সরকারি চাকরির পাশাপাশি গোপনে একটি মাদ্রাসা পরিচালনা করছেন। যেখানে চলছে নানান বাণিজ্য ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রতারণা।
সূত্র জানায়, প্রভাষক মুস্তফা কামাল “আল জামি’আহ আস-সালাফিয়্যাহ” নামক একটি মাদ্রাসার পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। অথচ সরকারি নীতিমালায় কোনো শিক্ষক একই সময়ে দুটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতে পারবে না। বিষয়টি নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষের অজানা থাকলেও স্থানীয় পর্যায়ে এটি অনেকেরই জানা। সরকারি কলেজের শিক্ষক হওয়া সত্ত্বেও মুস্তফা কামাল নিয়মিত মাদ্রাসায় সময় দিচ্ছেন। কলেজে তার উপস্থিতি অনিয়মিত হলেও মাদ্রাসার প্রতিটি কার্যক্রমে সক্রিয় তিনি।
অভিযোগ রয়েছে, সরকারি কর্মঘণ্টায়ও তিনি ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠানে কর্মরত থাকেন, যা সরাসরি সরকারি চাকরির বিধির লঙ্ঘন। মাদ্রাসার পরিচালক প্রভাষক মুস্তফা কামালের সঙ্গে কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আবু মামুনের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে বলে জানা গেছে। একাধিক সূত্র জানায় বর্তমান ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের আশীর্বাদেই দীর্ঘদিন ধরে এই মাদ্রাসা পরিচালনার সুযোগ পাচ্ছেন মুস্তফা কামাল। অধ্যক্ষ আবু মামুনের সিন্ডিকেটের বিশেষ সদস্য হিসেবে তাঁর পরিচিতি থাকায় কেউ মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছেন না। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, কলেজ কর্তৃপক্ষ বিষয়টি জানলেও কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। বরং কিছু ক্ষেত্রে প্রত্যক্ষ সহযোগিতাও করছে। মাদ্রাসার চরম অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়ে শিক্ষকদের একটি অংশ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হওয়া সত্ত্বেও এই মাদ্রাসাটি হয়ে উঠেছে একটি প্রভাবশালী চক্রের অর্থ উপার্জনের মাধ্যম। সরকারি শিক্ষক হিসেবে মুস্তফা কামালের এমন কর্মকাণ্ড কেবল সরকারি বিধির পরিপন্থী নয়, শিক্ষাক্ষেত্রের স্বচ্ছতা ও নৈতিকতাকেও প্রশ্নবিদ্ধ করছে। যথাযথ তদন্ত ও পদক্ষেপই পারে এমন কর্মকাণ্ড রুখে দিতে। এ বিষয়ে বরিশাল সরকারি মডেল স্কুল এন্ড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আবু মামুন বলেন, আইন অনুসারে কোনো সরকারি স্কুলের শিক্ষক আলাদা কোনো প্রতিষ্ঠান চালাতে পারবে না। যদি তিনি এমন কোনো কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকেন অবশ্যই তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
জানা গেছে, মাদ্রাসার অধ্যক্ষ হিসেবে রয়েছেন মুস্তফা কামালের স্ত্রী। এতে মাদ্রাসায় তৈরি হয়েছে এক প্রকার পারিবারিক নিয়ন্ত্রণ ও অস্বচ্ছতা। প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগ, আর্থিক লেনদেন, এমনকি ভর্তি কার্যক্রমেও একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ রয়েছে এই দম্পতির হাতে। অভিযোগ রয়েছে, প্রতিষ্ঠানটির প্রতিটি রুমে এসি লাগানোসহ বিলাসবহুল পরিবেশ তৈরি করা হয়েছে, যা স্থানীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম। প্রশ্ন উঠেছে, একজন কলেজ শিক্ষকের এতো আয় এবং বিলাসিতার উৎস কী?। সরকারি বেতন দিয়ে কি সম্ভব এতো ব্যয় বহন করা?। এছাড়াও মাদ্রাসাটির সাইনবোর্ডে বড় করে লেখা রয়েছে “অলাভজনক প্রতিষ্ঠান”। কিন্তু বাস্তবে প্রতিষ্ঠানটি একটি রমরমা বাণিজ্যিক কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে।
প্রি-প্লে থেকে সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত প্রায় ৫০০ শিক্ষার্থী রয়েছে যাদের মাসিক ফি বাবদ আয় হচ্ছে প্রায় ১০ লাখ টাকা। এর বাইরে রয়েছে বই-খাতা-পেনসিল থেকে শুরু করে সব শিক্ষা উপকরণ কিনতে বাধ্য করার অভিযোগ। সেখান থেকে প্রতিমাসে বাড়তি আয় করছে প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ। অভিভাবকরা জানায়, শিক্ষার্থীদের দেওয়া বই-খাতা কলম এমনকি পেন্সিল পর্যন্ত এই মাদ্রাসা থেকেই চড়া দামে কিনতে হয়। একজন অভিভাবক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমার বাচ্চার একমাসের খরচ প্রায় ৩ হাজার টাকা দিতে হচ্ছে। তাহলে এটা কেমন অলাভজনক প্রতিষ্ঠান?। বাইরের দোকান থেকে বই-খাতা কেনার সুযোগ নেই। বললেই বলা হয় আমাদের বই আলাদা। বাইরের বই মানানসই না। বাধ্য হয়ে আমাদের মাদ্রাসার দোকান থেকেই সবকিছু কিনতে হয়। তাও অতিরিক্ত দামে। এ বিষয়ে মাদ্রাসার পরিচালক মুস্তফা কামালের মোবাইলে ফোনে কল দিয়ে জানতে চাইলে ফোনটি কেটে দেন তিনি।
স্থানীয় শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, মাদ্রাসাটির কোনো সরকারি অনুমোদন নেই। এমনকি শিক্ষা বোর্ড কিংবা মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের কোনো নিবন্ধনও নেই। তা সত্ত্বেও নিয়মিত ক্লাস ইউনিফর্ম ভর্তি ফি মাসিক বেতন, এবং অভ্যন্তরীণ দোকানের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটি চালু রেখেছে। আরো জানা গেছে, মাদ্রাসাটির দাখিল স্তরের কোনো অনুমোদন না থাকলেও, অষ্টম ও নবম শ্রেণিতে ভর্তির বিজ্ঞাপন চালানো হচ্ছে।
এ বিষয়ে শিক্ষা অফিসার মাসুদুর রহমান বলেন, সরকারি চাকরির বিধি লঙ্ঘন করে একজন শিক্ষকের বেসরকারি প্রতিষ্ঠান চালানো আইন বিরোধী। খোঁজখবর নিয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার কথাও জানান তিনি।