প্রধান শিরোনামশিক্ষা

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় : বারবার ঘুরে আসে আন্দোলনের ঢেউ!

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় করেসপন্ডেন্ট, বরিশাল পোস্ট ॥ আন্দোলনের বিশ্ববিদ্যালয় নামে ২০১১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়। দ্বিতীয় উপাচার্য অধ্যাপক ড. এসএম ইমামুল হকের পদত্যাগের দাবিকে কেন্দ্র করে শুরু হয় আন্দোলনের ইতিহাস, যা পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের নানা প্রেক্ষাপটে আন্দোলনের ধারা গড়ে তোলে।

২০১৯ সালের ২৭ মার্চ উপাচার্য ইমামুল হকের পদত্যাগের দাবিতে একদল শিক্ষার্থী আন্দোলনে নামেন। পরে এতে সাধারণ শিক্ষার্থীরাও যুক্ত হন। যদিও এই আন্দোলনের পেছনে ছিল রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারের প্রচেষ্টা, যা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের সূচনা করে। এই আন্দোলন পরে নানা দাবি-দাওয়ায় রূপ নেয়।

অধ্যাপক ছাদেকুল আরেফিন উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয় আন্দোলন ছাড়া পরিচালিত হলেও প্রশাসনিক ব্যর্থতার পরিচয় দেন। পূর্ববর্তী শিক্ষার্থীদের অধিকাংশ দাবি তিনি বাস্তবায়ন করতে পারেননি। তার সময়ে অবকাঠামোগত উন্নয়ন না হওয়া, প্রশাসনিক দুর্বলতা ও অসহযোগিতাই পরবর্তী আন্দোলনের পটভূমি তৈরি করে।

এরপর উপাচার্য হিসেবে যোগ দেন অধ্যাপক ড. বদরুজ্জামান ভূঁইয়া। তিনি শুরুতেই শিক্ষার্থীদের আস্থা অর্জনে সক্ষম হন এবং অবকাঠামোগত উন্নয়নসহ নানা দাবির বাস্তবায়নে উদ্যোগ নেন। তবে ৫ আগস্ট একদল শিক্ষার্থীর আন্দোলনের মুখে তাকে পদত্যাগ করতে হয়। এ সময় শিক্ষার্থীদের একটি অংশ তার পক্ষেও অবস্থান নেয়।

বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ড. শুচিতা শারমিন দায়িত্ব গ্রহণের এক মাসের মধ্যেই আবারও আন্দোলন শুরু হয়। শিক্ষার্থীরা প্রথমে ২২ দফা দাবি উত্থাপন করেন, যা পরে ১ দফা উপাচার্যের পদত্যাগে রূপ নেয়। তবে একাংশ উপাচার্যের পক্ষে থাকায় আন্দোলন কিছুটা স্তিমিত হয়।

এই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই ১৫ ফেব্রুয়ারি একদল শিক্ষার্থী উপাচার্যের বাসভবনের গেট ভেঙে সিন্ডিকেট সভা পণ্ড করে দেয় এবং পুনরায় পদত্যাগের দাবি তোলে। এ বিষয়ে ‘বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এর আহ্বায়ক রাকিব আহমেদ এক ফেসবুক পোস্টে জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান সংকটের পেছনে একটি রাজনৈতিক দল দায়ী। অভিযোগ ওঠে, এক শিক্ষককে সিন্ডিকেটে অন্তর্ভুক্ত না করায় এই আন্দোলনের মাধ্যমে সভা বানচাল করার চেষ্টা করা হয়েছে।

তবে ঘটনা এখানেই শেষ নয়। ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক মহসীন উদ্দিনকে সিন্ডিকেট থেকে বাদ দেওয়ায় একদল শিক্ষার্থী প্রথমে চার দফা দাবিতে আন্দোলন করে। তবে বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে সেটি আবারো রূপ নেয় উপাচার্যের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে।

অধ্যাপক শূচিতা শরমিনের পদত্যাগ নিয়ে কেউ ইতিবাচক ও নেতিবাচক মন্তব্য করছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।অনেকে বেনামে ফেইক আইডি ব্যবহার করে শূচিতা শরমিনের থাকা নিয়ে যৌক্তিকতা তুলে ধরেন।আবার আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা বলছেন, কয়েকমাস হয়েছে উপাচার্য শূচিতা শরমিন এসেছে,কিন্তু শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবি তো মানাই হচ্ছেনা ; বরং তাদের আন্দোলন দমানোর জন্য মামলা ও জিডি করছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন শিক্ষার্থী জানান, উপাচার্য শূচিতা শরমিন কয়েক মাস হয়েছে মাত্র কাজ করার।এরই মধ্যে অবকাঠামো উন্নয়নে ফিজিবিলিটি টেস্টের বাজেট পাশ করেছেন।তাকে তো সুযোগ দিতে হবে।এখনো বহু সময় তার মেয়াদ আছে।

তারা বলেন, ফ্যাসিস্ট পুনর্বাসন করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে শূচিতা শরমিনের বিরুদ্ধে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১১ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় বিভিন্ন গ্রুপ আওয়ামী রাজনীতির সাথে জড়িয়ে পড়ে। শিক্ষকদের দুটি গ্রুপই আওয়ামী মদদপুষ্ট ছিলো,তাদের ছবিও আছে।

তারা আরও বলেন, একদল সুবিধা পাওয়ার আশায় একেক সময় একেক দাবি নিয়ে হাজির হয়,পূরণ করতে না পারায় সেই দলটি সক্রিয় হয়ে উঠেছে। এখানে উপাচার্য ও উপ-উপাচার্যের দ্বন্দ্ব স্পষ্ট রয়েছে। যে বিষয়টি ক্যাম্পাসের সবাই জানে।

আরও দেখান

সম্পর্কিত খবর

Back to top button