
বরিশালে বাঁচার জন্য শিশুদের লড়াই!
স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বরিশাল পোস্ট : আজ ১ মে, মহান মে দিবস। শ্রমজীবী মানুষের অধিকার আদায়ের প্রতীক এই দিনে বরিশাল নগরীতে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে এক করুণ বাস্তবতা—বিভিন্ন স্থানে শিশুদের দিয়ে করানো হচ্ছে ঝুঁকিপূর্ণ শ্রম।
নগরীর ওয়ার্কশপ, হোটেল, গ্যারেজ, ভাঙারি দোকান, জুতার কারখানা ও গণপরিবহনে কাজ করতে দেখা গেছে বহু শিশুকে। অনেক শিশু স্কুল ফাঁকি দিয়ে সড়কে পণ্য বিক্রি কিংবা ভিক্ষাবৃত্তিতে জড়িয়ে পড়ছে। দারিদ্র্য, পারিবারিক সংকট ও শিক্ষার অভাব এ পরিস্থিতির মূল কারণ হিসেবে চিহ্নিত।
সরেজমিনে, নগরীর বিউটি রোড এলাকায় একটি ইঞ্জিন মেরামতের কারখানায় ১৩ বছর বয়সী নয়নকে দেখা গেছে ভারী যন্ত্রপাতি নিয়ে কাজ করতে। নয়নের হাতে দস্তানা নেই, চোখে নেই কোনো সুরক্ষাচশমা, অথচ সে প্রতিদিন ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে কাজ করছে বিপজ্জনক পরিবেশে। কারখানার মালিক জানান, নয়নের বাবা নেই, আর তার মা অনুরোধ করায় ছেলেটিকে কাজে রাখা হয়েছে।
এমন আরও শিশুর সন্ধান পাওয়া গেছে নগরীর চাঁদমারী, রুপাতলী ও সাগরদী এলাকায়। কোথাও তারা কাঠের কাজ করছে, কোথাও বা রাস্তার পাশের চায়ের দোকানে টেবিল পরিষ্কার করছে অথবা গরম তেলে ভাজা-পোড়ার কাজ করছে।
যদিও শিশুদের দিয়ে শ্রম করানো আইনত দণ্ডনীয়, তবু বাস্তবতা ভিন্ন। কোনো ধরনের নিরাপত্তা, সুরক্ষা সরঞ্জাম বা স্বাস্থ্যঝুঁকি বিবেচনা না করেই শিশুদের দিয়ে চালানো হচ্ছে কঠিন কাজ। এতে তারা মানসিক ও শারীরিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, পাশাপাশি তাদের ভবিষ্যৎও অন্ধকারে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে।
মে দিবসের তাৎপর্য কেবল উৎসব নয়—এটি একটি প্রতিবাদ ও দাবি আদায়ের দিন। এই দিনে বরিশালে শিশুদের ঝুঁকিপূর্ণ শ্রমে যুক্ত থাকার ঘটনা আমাদের বিবেককে নাড়া দেয়। সমাজের প্রতিটি স্তরে সচেতনতা বৃদ্ধি, শিশুশ্রম নিরসনে স্থানীয় প্রশাসনের কঠোর নজরদারি এবং শিক্ষার সুযোগ নিশ্চিত করা ছাড়া এই সমস্যা সমাধান সম্ভব নয়।
শিশুদের নিরাপদ শৈশব ও মর্যাদাপূর্ণ ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে এখনই প্রয়োজন বাস্তবমুখী ও মানবিক পদক্ষেপ।