প্রধান শিরোনামবরিশাল নগরী

বরিশালের বিনোদনকেন্দ্রে বখাটেদের দাপট, অতিষ্ঠ দর্শনাথীরা!

প্রতিনিয়ত ঘটছে সংঘর্ষ ও লাঞ্চনার মতো ঘটনা ॥ প্রকাশ্যে চলছে মাদকসেবন ও বিক্রি

মেহেদী হাসান ॥ ৫৮ বর্গ কিলোমিটারের বরিশাল মহানগরী। এই নগরের বাসিন্দাদের অবসর সময় কাটাতে তৈরী হওয়া বিনোদনকেন্দ্রগুলোতে প্রতিনিয়ত বেড়ে চলেছে বখাটেদের উৎপাত। এদের দ্বারা লাঞ্চিত ও হয়রানির হওয়ার মতো ঘটনাও ঘটছে অহরহ। বিনোদনকেন্দ্রগুলো বর্তমানে ইভটিজিং, মাদক সেবন ও বিক্রি করার আখড়ায় পরিণত হয়েছে। তবে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোরতা ও পারিবারিক সচেতনতা না তৈরী করলে বখাটেদের রোধ করা সম্ভব নয় বলে মনে করছেন সুশিল সমাজ।

নগরীর বিনোদন কেন্দ্রগুলোর মধ্যে অন্যতম বেলস্ পার্ক, ত্রিশ গোডাউন, মুক্তিযোদ্ধা পার্ক, স্বাধীনতা পার্ক ও ভাঙ্গার পাড়ের প্রায় ৩ কিলোমিটারের ভেরিবাধ এলাকা। সাধারণত সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোয় অবসর সময় কাটাতে এসব এলাকাগুলো ভীর জমে দর্শনার্থীদের।

জানা যায়, নগরের আমতলা মোড় সংলগ্ন স্বাধীনতা পার্কের মধ্যে গত ১৩ এপ্রিল বেলা ১২ টায় কিশোরদের দু’গ্রুপের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। প্রত্যক্ষদর্শীদের বিবরণে জানা যায়, সংঘর্ষের মূল কারণ ছিলো পার্শ্ববর্তী একটি বালিকা বিদ্যালয়ের ছাত্রীদের উত্ত্যক্ত করা। এমন সংঘর্ষ পার্কিটিতে প্রতিদিনকার রুটিনে পরিণত হয়েছে।
স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, একই স্থানে ১২ এপ্রিল বখাটেদের আক্রমনের শিকার হন এক নারী। শুধু হামলা নয় ঐ সময় ছিনতাইয়ের শিকার হন তার সাথে থাকা এক যুবক। তার মোবাইল ফোন ও টাকা পয়সা ছিনিয়ে নিয়ে যায় ওই বখাটেরা।

অপরদিকে গত ১৪ এপ্রিল নগরের বেলস্ পার্ক মাঠে প্রেমিকা নিয়ে ১০/১২ জনের একটি কিশোর গ্রুপের মাঝে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এসময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের উপস্থিতি টের পেয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন উভয় পক্ষের কিশোর-যুবকেরা। শুধু বখাটেদের উপস্থিতি নয়, বেলস্ পার্ক লাগোয়া কেডিসি বস্তি এলাকার বখাটেরা মাঠে বসে মাদক সেবনসহ বিক্রি করার মতো অপরাধেও জড়াচ্ছে বলে অভিযোগ করেন ফুটপাতের ব্যবসায়ীরা।

নগরের কীর্তনখোলা নদীর পাড় ঘেষা বিনোদনকেন্দ্র ত্রিশ গোডাউন। গত ১৫ এপ্রিল রাতে এই বিনোদনকেন্দ্রে বন্ধুদের সাথে ঘুরতে গিয়ে মোটরসাইকেলের হর্ন বাজানোয় হামলার শিকার হন সোহানুর রহমান সিফাত নামে এক সেনা সদস্য।

কথা কাটা-কাটির এক পর্যায়ে সেনা সদস্য’র মোটরসাইকেল আটকে রাখেন স্টেডিয়াম কলোনীর সন্ত্রাসী আল-আমিন বাহিনীর সদস্য শাহাদত হোসেন বাপ্পি ও তার সঙ্গীরা। ওই ঘটনায় সেনা সদস্য সিফাতের মামলায় এখন পর্যন্ত মোট ৫ জনকে গ্রেফতার করে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী।

নগরের পুলিশ লাইন্স এলাকার বাসিন্দা খলিলুর রহমান মিঠু, প্রতিদিন সন্ধ্যার পর ত্রিশ গোডাউনে বন্ধুদের নিয়ে অবসর সময় কাটান। তিনি বলেন, ত্রিশ গোডাউন এখন বখাটেদের দখলে। প্রকাশ্য বেড়েছে মাদকের আসর। এক কথায় এখানে অবসর সময় কাটানোর পরিবেশ দিন দিন ধ্বংসের দিকে।

তিনি আরো বলেন, গোডাউনের নদীর পার এলাকার সাইলো জেটির পার্শ্ববর্তী ওয়াকওয়ে সন্ধ্যা হলেই ঘুটঘুটে অন্ধকারে পরিণত হয়। আর এই সুযোগে স্থানটিতে বসে গাজার আসর। সেখানে শুধু সেবন নয় মাদক বেচা-কেনাও চলে প্রকাশ্য। এমন অবস্থা নিয়ন্ত্রণে না আনলে এসকল স্থান খুব শীঘ্রই দর্শনাথী বিমুখ হবে বলে জানান তিনি।

একই দুরদশা নগরের বিএম স্কুল সংলগ্ন কাঞ্চন পার্কটির। পার্কটির লোহা দিয়ে লাগানো সীমানা প্রাচীরের একাংশ খুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এখানে প্রতিদিন হাঁটতে আসা স্থানীয় বাসিন্দা বাবুল হোসেন বলেন, পার্কটির সেই আগের পরিবেশ নেই। সীমানা প্রাচীর খুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। নিরাপত্তা বলতে কিছুই নেই। এছাড়াও একেবারেই অল্প বয়সি কিশোররা পার্কে বসে গ্যাং কালচার চর্চার মতো অপরাধে জড়িয়ে পড়েছে। তাদের কিছু বলতেও পারছেনা স্থানীয়রা।

বরিশাল সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের সদস্য-সচিব কাজী এনায়েত হোসেন শিবলু মঙ্গলবার বিকেলে এ প্রতিবেদককে বলেন, পারিবারিক ও সামাজিক শিক্ষার অবক্ষয়ই মূলত উঠতি বয়সি কিশোরদের বখে যাওয়ার কারণ। পাশাপাশি সকলকে নিজ নিজ স্থান থেকে সচেতেন হতে হবে, বাড়াতে হবে পুলিশিং কার্যক্রম।

এমন ঘটনার শিকার হলে সাথে সাথে পুলিশের সহায়তা নেয়ার জন্য জানিয়ে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার (দক্ষিণ) মোহাম্মদ ইমদাদ হুসাইন বলেন, নিয়মিত অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এবং বিনোদনকেন্দ্রগুলোর সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখতে শীঘ্রই অভিযান পরিচালনা করা হবে।

আরও দেখান

সম্পর্কিত খবর

Back to top button