
হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পরেও দেশে ভোট ও ভাতের অধিকার রক্ষা হয়নি
ভোলায় সাবেক এমপি হাফিজ ইব্রাহিম
ইউসুফ হোসেন অনিক, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট : বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির অন্যতম সদস্য ও ভোলা ২ আসনের সাবেক এমপি হাফিজ ইব্রাহিম বলেন- সংগ্রাম করে বিএনপি সহ অন্যান্যরা হাসিনা সরকারের পতন ঘটিয়েছে,বিএনপির আন্দোলন ছিলো ভোট আর এই দেশের মানুষের ভাতের অধিকার রক্ষা করার জন্য। তবে হাসিনার পতন হয়েছে কিন্তু এই দেশের মানুষের ভাতের ও ভোটের অধিকার রক্ষা হয়নাই। প্রতিটা মূহুর্তে জিনিস পত্রের দাম আকাশচুম্বী হয়ে গেছে। গনতন্ত্রের অধিকার ফিরে আনতে হলে নির্বাচনের বিকল্প কিছু নাই।
সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫) দুপুরে নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণা, রাষ্ট্রের পতিত ফ্যাসিবাদের নানা চক্রান্তের অপচেষ্টা মোকাবিলাসহ বিভিন্ন দাবিতে ভোলা জেলা বিএনপি আয়োজিত সমাবেশে এসব কথা বলেন তিনি।
হাফিজ ইব্রাহিম আরও বলেন, আজকে কিছু কিছু লোক সংস্কার সংস্কার বলে চিল্লায় ততোটুকু সংস্কার দরকার যতোটুকু এদেশে একটি গনতান্ত্রিক ভোটের অনুষ্ঠান করা যায়। এই গনতান্ত্রিক ভোটের পরে গঠিত পার্লামেন্ট এই দেশের যাবতীয় সংস্কারগুলো তারা করবে, বর্তমানে যারা আসবেন তারা প্রস্তাব করে রেখে যাবেন,এই প্রস্তাব অনুযায়ী আগামী পার্লামেন্ট পরিবর্তন করে তারা এদেশের মানুষের সাথে যুগোপযোগী করে তারা এটাকে সংসদে পাশ করে, এই সংস্কার তারা বাস্তবায়ন করবে। প্রিয় ভায়েরা আমাদের আন্দোলন শেষ হয়নাই, আমরা এখন আন্দোলনে আছি, এই আন্দোলনের ফল হলো আজকের জনসেবা, আমাদের নেতা তারেক রহমান সাহেব বলেছেন আন্দোলন শেষ হয়নাই যতোক্ষণ পর্যন্ত এই দেশে গনতান্ত্রিক নির্বাচন না হবে, ততোক্ষণ পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। তাই আপনারা সব সময় সজাগ থাকবেন, এই শেখ হাসিনা পতনের আন্দোলনে ভোলা জেলার নুরেআলম, রহিম সহ সর্বোচ্চ ৪৪ জন নেতাকর্মীকে প্রাণ দিতে হয়েছে। হাসিনা ও তার সরকারের কার্যকলাপের উপর জাতিসংঘ প্রতিবেদন দিয়েছে, সেই প্রতিবেদনে সারা বাংলাদেশ আট হাজার লোক আহত ও চৌদ্দশ লোক নিহত হয়েছে, তার মধ্যে ছয় শত লোক আমাদের বিএনপির লোক।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জহির উদ্দিন স্বপন বলেছেন, শেখ হাসিনা পালিয়ে গেছে, এখন জনগণকে রাষ্ট্রক্ষমতায় যুক্ত করতে হবে। যত দ্রুত সম্ভব রাষ্ট্রের মালিক জনগণের হাতে রাষ্ট্র বুঝিয়ে দিতে হবে। শেখ হাসিনা মনে করতো সে এবং তার পরিবার রাষ্ট্রের মালিক, কিন্তু আমরা মনে করি রাষ্ট্রের মালিক জনগণ। অতএব ব্যালটের মাধ্যমে রাষ্ট্রের মালিকদের অতিদ্রুত রাষ্ট্র বুঝিয়ে দিতে হবে।
জহির উদ্দিন স্বপন বলেন, দেশের সকল সমস্যার একমাত্র সমাধান জাতীয় নির্বাচন। নির্বাচনে জনগণ যাতে অবাধে ভোট দিতে পারে তার জন্য সংস্কার দরকার। আমরা শর্ত দিয়েছি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য যে সংস্কার দরকার অবিলম্বে তা করতে হবে, তা করতে বিলম্ব হলে আমরা আমাদের কণ্ঠস্বরকে কঠিন করব, বিলম্বকে আমরা বরদাশত করব না।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টাকে প্রশ্ন করে তিনি জানতে চান, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য যে সংস্কার দরকার তা করতে এত দেরি হচ্ছে কেন? সংস্কার কমিশনগুলো প্রতিবেদন জমা দিয়েছে, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ঐক্যমত্যের বৈঠক করেছেন, আর কী কাজ বাকি থাকতে পারে? একমাত্র সংস্কারের প্রজ্ঞাপন ছাড়া আর তো কোনো কাজ বাকি থাকে না।
তিনি বলেন, যারা অপ্রয়োজনে নির্বাচনের সময় ক্ষেপণ করতে চায়, তারা জনগণকে রাষ্ট্রের মালিকানা থেকে দূরে রাখতে চায়। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি এই অপরাধে শেখ হাসিনাকে সকলকে সঙ্গে নিয়ে ক্ষমতা থেকে উৎখাত করেছে। ভবিষ্যতেও কেউ যদি জনগণকে বাদ দিয়ে রাষ্ট্র দখল করতে চায়, আমরা তাদের ব্যাপারেও তীব্র পর্যবেক্ষণ বহাল রেখেছি।
তিনি আরও বলেন, আমরা তারেক রহমানের নেতৃত্বে এমন রাষ্ট্র গঠন করব যেখানে নিশিরাতের ভোট হবে না, ভোটের আগে শতকরা ৫৫ ভাগ আসনে কেউ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিততে পারবে না। জাতি আজ একটি প্রশ্নে ঐক্যবদ্ধ, সেটা হলো ফ্যাসিবাদকে আর ফেরত আসতে দেওয়া হবে না এবং গণহত্যার দায়ে শেখ হাসিনাসহ জড়িতদের বিচার করতে হবে।
উপস্থিত নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্য তিনি বলেন, ভোলার ছেলে ছাত্রদলের নূরে আলম, স্বেচ্ছাসেবক দলের আব্দুর রহিম ও মো. হাসানসহ শহীদদের রক্তের বিনিময়ে আপনারা যে অধিকার পেয়েছেন সেই অধিকার আপনারা স্পর্শ করতে পারবেন যেদিন আপনাদের হাতে ব্যালট পেপার আসবে। তাই অনতিবিলম্বে নির্বাচনের দাবি তুলেছে বিএনপিসহ সকল গণতান্ত্রিক শক্তি। আপনারা আমাদের পরবর্তী ডাকে সাড়া দেবেন।
সমাবেশে ভোলা জেলা বিএনপির সভাপতি গোলাম নবী আলমগীরের সভাপতিত্বে প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত হয়ে বক্তব্য দেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য হাফিজ ইব্রাহিম। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন বরিশাল বিভাগীয় বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুল হক নান্নু, বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মো. হায়দার আলী লেলিন, বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও ভোলা জেলা সম্মেলন প্রস্তুত কমিটির আহ্বায়ক আবু নাসের মোহাম্মদ রহমতুল্লাহ,ভোলা জেলা বিএনপির সদস্যসচিব রাইসুল আলমসহ ভোলা জেলার বিভিন্ন উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও সদস্য সচিবগণ।