
হাসনাত আব্দুল্লাহকে নিয়ে পুলিশ কর্মকর্তা পবিত্র মন্ডলের ফেসবুকে ট্রল!
এটি যে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, তা স্পষ্ট : ডা. মিতু
মজিবর রহমান নাহিদ, বরিশাল পোস্ট ॥ রবিবার গাজীপুরে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহর গাড়িতে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা দেশজুড়ে তীব্র প্রতিক্রিয়ার জন্ম দিয়েছে। ধারালো অস্ত্রের আঘাতে তার গাড়ির গ্লাস ভেঙে যায় এবং তার হাতের কনুইয়ে গুরুতর জখম হয়। ঘটনার প্রতিবাদে এনসিপির নেতাকর্মীরা সারাদেশে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেন। পাশাপাশি, হামলাকারীদের দ্রুত গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান তারা।
হামলার পরপরই পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে পৌঁছে অভিযান পরিচালনার নির্দেশ দেন। অভিযানের অংশ হিসেবে এখন পর্যন্ত আওয়ামী লীগের ৫৪ জন নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে পুলিশ।
তবে, ঘটনার গুরুত্ব যখন সর্বত্র আলোচিত হচ্ছিল, ঠিক তখনই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি অশোভন পোস্ট দিয়ে সমালোচনার মুখে পড়েন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-পুলিশ পরিদর্শক (এসআই) পবিত্র কুমার মন্ডল। আহত হাসনাত আবদুল্লাহর ভাইরাল হওয়া ছবির মতো একটি ছবি এডিট করে পোস্ট করেন মোহাম্মাদপুর থানার এসআই পবিত্র। ক্যাপশনে লেখেন—“কিছুক্ষণ আগে… লেগুনার সাথে। সবাই বছিলা ব্রীজে আসেন….”
এই পোস্টকে কেন্দ্র করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সৃষ্টি হয় তীব্র বিতর্ক। পোস্টের কমেন্টে এমডি মহসিন খান নামে একজন মন্তব্য করেন, “প্রাণ সস লাগালে আরও ফুটত।” আরেক পুলিশ কর্মকর্তা আব্দুর রউফ লেখেন, “দূর হালা এটা তো লিপিস্টিক…..।” এছাড়া নক্ষত্র নক্ষত্র নামে একজন মন্তব্য করেন, “আপনে পারেন বটে।”
বরিশাল পোস্টের অনুসন্ধানে জানা যায়, পবিত্র কুমার মন্ডল বরিশালের সন্তান। তিনি সরকারি বিএম কলেজ থেকে পড়াশোনা সম্পন্ন করেন এবং ছাত্রজীবনে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন। তার ফেসবুক প্রোফাইলে ২০২১ সালে ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে দলের পতাকার ছবি পোস্ট করে তিনি লেখেন—“শুভ জন্মদিন প্রিয়”।
এছাড়া, পবিত্র কুমার মন্ডলের ফেসবুক প্রোফাইলে পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, সাম্প্রতিক সময়ে তিনি অন্তবর্তী সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও আইন উপদেষ্টাকে নিয়েও ট্রল করেছেন। ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে বর্তমান সরকার, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের নেতা-কর্মী এবং আওয়ামী বিরোধী অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর বিরুদ্ধে নানা ব্যঙ্গাত্মক পোস্ট দিয়ে যাচ্ছেন তিনি।
একজন পুলিশ কর্মকর্তার এমন দায়িত্বহীন ও অশোভন আচরণে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন সচেতন নাগরিকরা। তারা মনে করছেন, এমন মানসিকতা ও আচরণ পুলিশ বাহিনীর নিরপেক্ষতা ও মর্যাদাকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে।
এবিয়ষে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের যুগ্ম মুখ্য সংগঠক ডাঃ মাহমুদা মিতু বরিশাল পোস্টকে বলেন, “হাসনাত আবদুল্লাহ শুধু আমাদের এনসিপির নেতা নন, তিনি বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের একজন সাহসী নেতাও। তিনি সারাদেশে একটি সুপরিচিত নাম। তার ওপর এমন একটি ন্যাক্কারজনক হামলার পর যদি কেউ সেটিকে ট্রলের উপকরণ বানায়, তাহলে এটি যে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, তা স্পষ্ট বোঝা যায়। একজন দায়িত্বশীল পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে এমন আচরণ কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা বিশ্বাস করি, পুলিশ জনগণের বন্ধু। ২০২৪ সালের পর জনগণ পুলিশের ওপর যে আস্থা রেখেছে, তার মর্যাদা রক্ষা করা প্রয়োজন। অথচ, কিছু পুলিশ সদস্যের আচরণ সেই আস্থাকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে।”
ডাঃ মিতু বলেন, “আসলে যাঁরা আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সরাসরি বা পরোক্ষভাবে জড়িত, তাদের মধ্যে এখনো কোনো অনুশোচনার বোধ কাজ করছে না। তারা আগের মতোই অনলাইনে বিভিন্ন ধরনের ট্রল, হুমকি-ধামকি-গুজব ছড়িয়ে যাচ্ছেন।”
এসআই পবিত্র কুমার মন্ডলের ট্রলের বিষয়টি সুষ্ঠ তদন্তের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত বলে মনে করেন জাতীয় নাগরিক পার্টির এই নেত্রী।