
বরিশাল বিভাগের দর্শনীয় স্থানসমূহ
বরিশাল পোস্ট ডেস্ক :
বরিশাল বিভাগ, বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের এক অনন্য প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ঘেরা অঞ্চল, যা ঐতিহাসিক নিদর্শন, নদ-নদী, বনাঞ্চল এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যে পরিপূর্ণ। যারা প্রকৃতি ও ইতিহাস ভালোবাসেন, তাদের জন্য বরিশাল বিভাগের প্রতিটি জেলা হয়ে উঠতে পারে এক অপূর্ব গন্তব্য। চলুন জেনে নিই বরিশালের উল্লেখযোগ্য দর্শনীয় স্থানগুলো সম্পর্কে:
১. কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত, পটুয়াখালী
বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত “সানরাইজ ও সানসেট পয়েন্ট” নামে খ্যাত। এখান থেকে একসাথে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত উপভোগ করা যায়, যা দেশের আর কোথাও সম্ভব নয়। বিশাল সৈকতজুড়ে হাঁটাহাঁটি, সমুদ্র স্নান কিংবা মাছ ধরা—সবকিছুই যেন এক রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা।
২. গুঠিয়া মসজিদ (বায়তুল আমান জামে মসজিদ), বরিশাল
উজিরপুর উপজেলার চাংগুরিয়া গ্রামে অবস্থিত এই আধুনিক মসজিদটি স্থাপত্যশৈলীর দিক থেকে অত্যন্ত চমৎকার এবং প্রশস্ত পরিবেশে নির্মিত, যা পর্যটকদের মনে গভীর ছাপ ফেলে।
৩. দুর্গাসাগর দীঘি, বরিশাল
১৭৮০ সালে খননকৃত এই দীঘিটি বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার মাধবপাশায় অবস্থিত। প্রাকৃতিক পরিবেশে ঘেরা এই দীঘি পাখিপ্রেমীদের জন্যও আকর্ষণীয় স্থান।
৪. লাকুটিয়া জমিদার বাড়ি, বরিশাল
চারশো বছরের পুরনো এই জমিদার বাড়িটি বরিশালের ইতিহাস এবং স্থাপত্যরীতির জীবন্ত নিদর্শন। কাশিপুর ইউনিয়নে অবস্থিত এই প্রাসাদ দর্শনার্থীদের কৌতূহল জাগায়।
৫. অক্সফোর্ড মিশন চার্চ, বরিশাল
বরিশাল শহরের এক কোণে লাল ইট দিয়ে তৈরি এই গির্জাটি ১৯০৩ সালে নির্মিত হয়। এর পাশের বিশাল খোলা মাঠ এবং শান্ত পরিবেশ দর্শনার্থীদের মুগ্ধ করে।
৬. শাপলা গ্রাম, সাতলা, বরিশাল
বর্ষাকালে সাতলা গ্রামের বিলগুলো রূপ নেয় শাপলার রাজ্যে। হাজার হাজার লাল শাপলার মনোমুগ্ধকর দৃশ্য প্রকৃতিপ্রেমীদের জন্য এক স্বর্গীয় অনুভূতি এনে দেয়।
৭. ভাসমান পেয়ারা বাজার, ভীমরুলি, ঝালকাঠি
এই বাজারটি বাংলাদেশের অন্যতম ব্যতিক্রমধর্মী বাজার। নৌকায় করে পেয়ারা কেনাবেচা দেখতে এখানে প্রতি বছর প্রচুর পর্যটক ভিড় করেন।
৮. গজনীর দীঘি, বরিশাল
মুঘল আমলের এই দীঘিটি ১৫৫০ সালে খনন করা হয় এবং এটি বরিশালের ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপটে গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে।
৯. মনপুরা দ্বীপ, ভোলা
ভোলা জেলার নদী ও সাগরের মিলনস্থলে অবস্থিত মনপুরা দ্বীপ একান্তে সময় কাটাতে ইচ্ছুক পর্যটকদের জন্য একটি আদর্শ স্থান। নৌকা ভ্রমণ, মাছ ধরা এবং সাগরের ঢেউয়ের শব্দ যেন এক ভিন্ন অভিজ্ঞতা।
১০. শিব বাড়ি মন্দির, ঝালকাঠি
ঝালকাঠি জেলার এই শতবর্ষী হিন্দু মন্দিরটি প্রতি বছর ফাল্গুনে উৎসব ও মেলার আয়োজনের মাধ্যমে হাজারো ভক্ত ও পর্যটককে আকৃষ্ট করে।
১১. কলসকাঠী জমিদার বাড়ি, বরিশাল
বাকেরগঞ্জ উপজেলার এই জমিদার বাড়িটি অতীত ঐশ্বর্যের প্রতিচ্ছবি এবং স্থানীয় ইতিহাস অন্বেষণকারীদের জন্য অন্যতম আকর্ষণ।
ভ্রমণ নির্দেশিকা:
যাতায়াত: বরিশাল বিভাগে যেতে ঢাকা থেকে সড়ক, নৌ ও আকাশপথে যাতায়াতের সুব্যবস্থা রয়েছে। বিশেষ করে কুয়াকাটাগামী লঞ্চ ও বাস পর্যটকদের জন্য সুবিধাজনক।
আবাসন: বরিশাল শহর, কুয়াকাটা ও অন্যান্য পর্যটন এলাকাগুলোতে হোটেল, রিসোর্ট এবং গেস্ট হাউস সহজলভ্য।
খাবার: বরিশালের ইলিশ মাছ, নারিকেল দুধে রান্না করা বিভিন্ন পদ এবং স্থানীয় ভর্তা–ভাজি পর্যটকদের রসনা তৃপ্ত করে।
শেষ কথা:
বরিশাল বিভাগ শুধু ইতিহাস নয়, প্রকৃতিরও এক অপরূপ রূপ প্রকাশ করে। কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত থেকে শুরু করে ভাসমান বাজার বা প্রাচীন জমিদার বাড়ি—সব কিছুই ভ্রমণপিপাসুদের জন্য নিয়ে আসে ভিন্ন অভিজ্ঞতা ও সৌন্দর্যের ছোঁয়া।