
বরিশালে অবৈধ দখল উচ্ছেদে বাঁধার মুখে বিসিসি কর্তৃপক্ষ!
উচ্ছেদ বিরোধীদের ভুড়িভোজ ॥ আ'লীগ নেতাদের ইশারায়ই হয়েছিলো দখল!
স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বরিশাল পোষ্ট ॥ বরিশাল নগরীর ২২ নম্বর ওয়ার্ডের কাজিপাড়া এলাকায় আওয়ামী লীগ অনুসারীদের দখলে থাকা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করতে গিয়ে শেষ পর্যন্ত ফিরে আসতে হয়েছে বরিশাল সিটি কর্পোরেশন (বিসিসি) কর্তৃপক্ষকে। রবিবার (১৩ এপ্রিল) দিনভর সেনাবাহিনী ও পুলিশ সদস্যদের সহায়তায় উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উচ্ছেদ অভিযানে গেলেও শেষ পর্যন্ত তা বাস্তবায়ন করতে না পারায় হতাশা প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা।
সূত্রে জানা গেছে, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের দেয়াল ঘেঁষে সরকারি সড়কের একাংশ দখল করে আটটি দোকানঘর নির্মাণ করা হয়। অভিযোগ রয়েছে, এই দখল ও নির্মাণের সঙ্গে জড়িত ছিলেন স্থানীয় আওয়ামী লীগের কয়েকজন প্রভাবশালী নেতা। ফলে সড়কটির একটি অংশ সংকীর্ণ হয়ে পড়ে, যা অ্যাম্বুলেন্স, ফায়ার সার্ভিসসহ জরুরি যানবাহনের চলাচলে বাধা সৃষ্টি করে। দীর্ঘদিন ধরে ভোগান্তির শিকার হলেও প্রভাবশালীদের ভয়ে কেউ মুখ খুলতে পারেননি।
স্থানীয়রা জানান, দোকানঘর নির্মাণের সময় কিছু বাসিন্দা প্রতিবাদ জানালেও পরবর্তীতে হেনস্তার শিকার হয়ে প্রতিবাদ থেকে সরে দাঁড়ান। তবে বর্তমান সরকার প্রশাসনকে দুর্নীতিমুক্ত করার উদ্যোগ নেওয়ায় স্থানীয়দের মধ্যে আশার সঞ্চার হয়। সেই আশায় তারা সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি অবহিত করেন এবং সিটি কর্পোরেশন প্রাথমিক তদন্তে অভিযোগের সত্যতাও পায়।
অভিযোগের ভিত্তিতে বিসিসির কর্তৃপক্ষ দখলদারদের উচ্ছেদের নোটিশ দিলেও তারা কর্ণপাত করেনি। একপর্যায়ে রবিবার সকালে উর্দ্ধতন কর্মকর্তারা অভিযান চালাতে গেলে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন সমাজকর্মী ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ডা. মনীষা চক্রবর্তী। তিনি দাবি করেন, দোকান নির্মাণকারীরা সবাই ভ্রাম্যমাণ ও অসহায় ব্যবসায়ী, যাদের বিকল্প কোনো জায়গা নেই। তার এমন বক্তব্যে একপর্যায়ে উচ্ছেদ অভিযান স্থগিত করে ফিরে আসে সিটি কর্পোরেশন।
তবে ঘটনাটিকে কেন্দ্র করে আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য সামনে এসেছে। স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, উচ্ছেদ ঠেকাতে আগেই পরিকল্পিতভাবে ‘ভুরিভোজ’ ও খিচুরি আয়োজন করে লোকজন জড়ো করেন উচ্ছেদবিরোধীরা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সেই ভুরিভোজের ছবি ইতোমধ্যে ভাইরাল হয়েছে। অনেকেই বলছেন, উচ্ছেদের প্রতিবাদে জনসমর্থন দেখানোর জন্য উদ্দেশ্যমূলকভাবে এই আয়োজন করা হয় যাতে সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তাদের মনে জনরোষের একটি চিত্র তুলে ধরা যায়।
স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করে জানান, “আমরা দীর্ঘদিন ধরে এই সড়কে দুর্ভোগ পোহাচ্ছি। সিটি কর্পোরেশন অভিযান শুরু করায় আমরা স্বস্তি পেয়েছিলাম। কিন্তু হঠাৎ ডা. মনীষা চক্রবর্তী এসে দখলদারদের পক্ষে অবস্থান নেন—যা আমাদের বিস্মিত করেছে। তিনি বরাবরই অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন, কিন্তু এবার হয়তো কেউ তাকে বিভ্রান্ত করেছে।”
এ বিষয়ে ডা. মনীষা চক্রবর্তীর মুঠোফোনে রিং দেয়া হলে তিনি রিসিভ করে সাংবাদিক শুনে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়।
অপরদিকে বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের উচ্ছেদ শাখার কর্মকর্তা জানান, আমরা বুলডোজার নিয়ে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করতে গেলে উচ্ছেদবিরোধীদের বাঁধার তোপের মুখে ফিরে আসি। পরবর্তীতে বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক ও বিভাগীয় কমিশনার আগামী বৃহস্পতিবার পর্যন্ত তাদের সময় বেধে দেন উপযুক্ত কাগজ দেখানোর জন্য নাহলে পরবর্তীতে আইনআনুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে বলেও জানান এই কর্মকর্তা।
স্থানীয় সচেতন মহল মনে করছেন, এভাবে দখলদারদের প্রভাব ও রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় বরিশালের সাধারণ মানুষ বছরের পর বছর ভোগান্তিতে পড়ছে। তারা বরিশাল সিটি কর্পোরেশন ও প্রশাসনের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের কাছে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন।