স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বরিশাল পোস্ট : স্বাস্থ্য উপদেষ্টার পদ পাওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের (এনআইসিআরএইচ) সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. শেখ গোলাম মোস্তফার কাছ থেকে নগদ ১০ লাখ টাকা এবং ২০০ কোটি টাকার চেক হাতিয়ে নেয়ার মুলহোতা সমন্বয়কের ভাই পরিচয় দেওয়া ব্যক্তি কামাল হোসেন সবুজ। তিনি (সবুজ) বরিশালের উজিরপুর পৌরসভা ৫ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা মৃত মোহাম্মদ আজিজ শিকদারের ছেলে ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য।
গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর এলাকা ত্যাগ করে ঢাকায় ওঠেন সবুজ। সেখানে নিজেকে সমন্বয়কারীর ভাই পরিচয়ে প্রতারনার আশ্রয় নিয়ে টাকা হাতিয়ে নেয়ার ঘটনাটি বেসরকারি টেলিভিশন বাংলা ভিশনে প্রচারের পর উজিরপুর উপজেলাজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে। চাঞ্চল্যকর এ ঘটনার অভিযোগে বলা হয়, অধ্যাপক ডা. শেখ গোলাম মোস্তফা যিনি এনআইসিআরএইচ-এর পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তাকে স্বাস্থ্য উপদেষ্টার পদ পাওয়ার আশ্বাস দিয়ে এক সমন্বয়কারীর ভাই পরিচয়ে কামাল হোসেন সবুজ আর্থিক লেনদেনে জড়িয়েছেন। সবুজ নিজেকে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যুমনা থেকে আগত হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন।
অধ্যাপক ডা. শেখ গোলাম মোস্তফা টেলিভিশন চ্যানেলে প্রচারিত সংবাদের সাক্ষাতকারে বলেছেন-তিনি প্রথমে রাজি না হওয়ায় তাকে কৌশলে অন্তবর্তীকালিন সরকারকে সহযোগিতা না করার জন্য হুমকি প্রদর্শন করা হয়। একপর্যায়ে তিনি এতো টাকা তার কাছে নেই জানালে কামাল হোসেন সবুজ ও তার সহযোগিরা নগদ ১০ লাখ টাকা নিয়ে ২০০ কোটি টাকার চারটি চেক নিয়েছেন।
এই লেনদেনের মধ্যস্থতাকারী হিসেবে আরিফুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি জড়িত। আর উজিরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য কামাল হোসেন সবুজ সরাসরি অধ্যাপক ডা. শেখ গোলাম মোস্তফার চেম্বার থেকে নগদ টাকা ও চেকগুলো সংগ্রহ করেছেন। টাকা হাতিয়ে নেয়ার কান্ডে উজিরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সভাপতি কামাল হোসেন সবুজ জড়িত থাকার বিষয়টি বেসরকারি টেলিভিশনে প্রচারিত হওয়ার পর পুরো উজিরপুর উপজেলাজুড়ে ব্যাপক তোলপাড় শুরু হয়েছে।
খোঁজনিয়ে জানা গেছে, বিগত পতিত সরকারের আমলে কামাল হোসেন সবুজ ছিলেন অপ্রতিরোধ্য। কামাল হোসেন সবুজের বড় ভাই আবুল কালাম আজাদ ছিলেন আওয়ামী লীগের সাবেক স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী সাহেরা খাতুনের ঘনিষ্টজন। যেকারণে মন্ত্রী থাকাকালীন সাহেরা খাতুন উজিরপুরে কামাল হোসেন সবুজের বাসায় ভুড়িভোজ করেছিলেন। এরপর থেকেই এলাকায় অপ্রতিরোধ্য হয়ে ওঠেন কামাল হোসেন সবুজ। ক্ষমতার প্রভাবে তিনি সাংবাদিকতার লেবাস লাগিয়ে উজিরপুর প্রেসক্লাবের আহবায়ক হয়েছিলেন। উজিরপুর উপজেলা কেন্দ্রীয় সমবায় সমিতি লিমিটেডের (বিআরডিবি) চেয়ারম্যান পদ দখলে রেখে হাতিয়ে নিয়েছেন কয়েক লাখ টাকা।
কামাল হোসেন সবুজের বিরুদ্ধে বিগত আওয়ামী লীগ সরকার আমলে গভীর নলকূপ দেয়ার নাম করে উজিরপুর উপজেলার শতাধিক ব্যক্তির কাছ থেকে ৪০ হাজার টাকা উত্তোলন করে কাউকে গভীর নলকূপ না দিয়েই সমূদয় টাকা আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে। এছাড়াও তিনি উজিরপুর দাখিল মাদ্রাসার সভাপতির দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে নিয়াগ বাণিজ্য, মাদ্রাসার নতুন ভবনের ঠিকাদারের কাছ থেকে ২৫ লাখ টাকা চাঁদা আদায়, টেন্ডারবাজিসহ সরকারি টাকা আত্মসাতের বিস্তার অভিযোগ রয়েছে সবুজের বিরুদ্ধে।
অভিযুক্ত উজিরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য কামাল হোসেন সবুজের সাথে যোগাযোগ জন্য তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তা বন্ধ থাকায় কোন বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। সবুজের পরিবারের সদস্য ও নিকট আত্মীয়-স্বজনরাও এ ব্যাপারে কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।